রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যেন কাজে
লাগানো যায়, সে প্রচেষ্টা চালানো উচিত। কেননা এ মাস আমলের মাস। ইবাদতের মাস। এটি ইবাদতের
বসন্তকাল। এখানে রমজানের বিশেষ কিছু আমল উল্লেখ করা হলোঃ
তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করাঃ রমজানে কিয়ামুল লাইল করার কথা আছে। কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের নামাজ। তারাবির নামাজ যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে, তেমনি শেষ রাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত।
কোরআন খতম
ও তিলাওয়াতঃ
রমজানে যেহেতু প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে
দেওয়া হয়, তাই এ মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য
আবশ্যক।
সদকা বা দানঃ
প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, ‘মহানবী (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে
বেশি দানশীল। আর রমজানে তার বদান্যতা আরও বেড়ে যেত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩২০৮)
ইতিকাফঃ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ‘মহানবী (সা.)
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭১)
ওমরাহ আদায়ঃ
রমজানে একটি ওমরা আদায় করলে অন্য মাসে ৭০টি ওমরাহ
করার সওয়াব হয়। তাই এ মাসে ওমরাহ আদায় করাটাও অনেক বড় সওয়াবের কাজ। অবশ্য এখন পরিস্থিতির
কারণে সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে এক বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আমার সঙ্গে হজ আদায়ের
সমতুল্য। (মাজমাউল কাবির, হাদিস ৭২২; জামেউল আহাদিস, হাদিস : ১৪৩৭৯)
তওবা ও ইস্তেগফার করাঃ
সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব, বিশেষ করে এ মাসে
তো বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম
থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা
করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। (জামিউল উসুল, হাদিস : ১৪১০)
অধিক হারে নেক আমল করাঃ
রমজান মাসে অধিক হারে নেক আমল করতে চেষ্টা করা প্রত্যেক
মুসলিম নর-নারীর জন্য একান্ত আবশ্যক। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে। আয়েশা (রা.) থেকে
বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ
দশক এসে যেত, রাসুল (সা.) তখন রাত্রি জাগরণ করতেন, পরিবারবর্গকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে
দিতেন, লুঙ্গি শক্ত ও ভালো করে বেঁধে (প্রস্তুতি গ্রহণ) নিতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১১৭৪)
বেশী বেশী জিকির করাঃ
আল্লাহতায়ালার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু; যা সৃষ্টিকে
স্রষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। তার সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের
ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের ওপর অবিচল রাখে। এ কারণে আল্লাহতায়ালা মুসলিম
ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রি গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,
‘মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে
স্মরণ করো এবং সকাল-বিকেল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)
একে অন্যকে কোরআন শোনানোঃ
রমজান মাসে একজন অপরজনকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম
আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিব্রাইল (আ.)
রমজানে প্রতিরাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রাসুল (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন।
(বোখারি, হাদিস : ১৯০২)
রোযা রাখাঃ
ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হলো রোজা।
আর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে
রোজা পালন করে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) সাহরি খাওয়া হাদিসে এসেছে, ‘সাহরি হলো বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরি
খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোঁক পানি পান করে হলেও সাহরি খেয়ে নাও। কেননা সাহরির খাবার
গ্রহণকারীকে আল্লাহতায়ালা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস
: ১১১০১)
রোজাদারদের
ইফতার করানোঃ
রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের মতো রোজার সওয়াব
পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে,
সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। এতে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র
হ্রাস করা হবে না। (আহমদ, হাদিস : ২২৩০২)
ইফতার করাঃ
সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা বিরাট ফজিলতপূর্ণ
আমল। এতে কোনো বিলম্ব না করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে,
খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র। (সুনানে আবু দাউদ
: হাদিস নম্বর ২৩৫৭
তারাবি পড়াঃ
সালাতুত তারাবি পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবি পড়ার
সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু
রমাদান (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(বোখারি,
হাদিস : ২০০৯)
কল্যাণকর
কাজ বেশি বেশি করাঃ
এ মাসে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসের প্রতি রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী, তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। (তুমি কি জানো?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহতায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪)
তাকওয়া অর্জন করাঃ
তাকওয়া বা আল্লাহভীতি এমন একটি গুণ, যা বান্দাকে
যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তার আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া
নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কোরআনে এসেছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা
হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে
তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
লাইলাতুল কদর তালাশ করাঃ
রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে
উত্তম। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘কদরের রাত হাজার
মাসের চেয়েও উত্তম (সুরা কদর, আয়াত ৪) রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত
করবে, তাকে আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বোখারি, হাদিস : হাদিস ৩৫)
ফিতরা দেওয়াঃ
এ মাসে রোজার ত্রুটিবিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেওয়া
আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) ঈদের সালাত আদায়ের আগে ফিতরাহ
আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (বোখারি, হাদিস : ১৫০৩)