জা’ফর ইবন আবী তালীব-৬ষ্ঠ পর্ব

উম্মু সালামা বলেন   ঃ আমরা একথা জানতে পেয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় পড়লাম। আমরা পরস্পর জিজ্ঞেস করলাম   ঃ ‘বাদশাহ যখন ঈসা ইবন মরিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন ,তোমরা তখন কি বলবে? ‘সবাই ঐকমত্যে পৌছলাম; তার সম্পর্কে আল্লাহ যা বলবেন তার অতিরিক্ত আর কিছুই আমরা বলবোনা। আমাদের নবী তার সম্পর্কে যা কিছু এনেছেন তা থেকে আমরা এক আংগুলের ডগা পরিমাণও বাড়িয়ে বলবনা। তাতে আমাদের ভাগ্যে যা থাকে তা-ই হবে। আমাদের পক্ষ থেকে এবারও জা’ফর ইবন আবী তালীব কথা বললেন। 

নাজ্জাশী আমাদের ডেকে পাঠালেন। আমরা তার দরবারে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, পাদ্রীরা পূর্বের দিনের মতো একই বেশভূষায় বসে। আছে। আমর ইবনুল আস ও তার সংগী সেখানে উপস্থিত হতেই বাদশাহ অমাদরেকে জিজ্ঞেস করলেন  ঃ ঈসা ইবন  মরিয়ম সম্পর্কে তোমরা কি বলে থাক?

জা’ফর ইবন আবী তালীব েবললেন  ঃ আমাদের নবী তাঁর সম্পর্কে যা বলেন তার অতিরিক্ত আমরা কিছুই বলিনে। 

তিনি কি বলে থাকেন?

‘তিনি বলেন  ঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল । তিনি তার রূহ ও কালাম-যা তিনি কুমারী ও পবিত্র মরিয়মের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন ।

জ’ফরের কথা শুনে নাজ্জাশী হাত দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে করতে বললেন ‘আল্লাহর কসম!ঈসা  ইবন মরিয়ম সম্পর্কে তোমাদের নবী যা বলেছেন তা একটি লোম পরিমাণও অতিরঞ্জন নয়।  একথা শুনে নাজ্জাশীর আশে পাশে উপবিষ্ট পেট্রিয়ার্করা তাদের নাসিকা -ছিদ্র দিয়ে ঘৃণাসূচক  শব্দ বের করল। বাদশাহ , বললেন “তা তোমরা যতই ঘৃণা করনা কেন। তারপর তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন  ঃ যাও,তোমরা স্বাধীন ও নিরাপদ । কেউ তোমাদে গালি দিলে বা কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তার বদলা নেওয়া হবে। আল্লাহর কসম! আমি সোনার পাহাড় লাভ করি। আর তার বিনিময়েতোমাদের কারও ওপর সামান্য বিপদ আপতিত হোক-এটাও আমার পছন্দনীয় নয়। এরপর তিনি আমর ও তার সংগীর দিকে ফিরে বললেন  ঃ ‘এ দু’ব্যক্তির উঢৌকন তাদেরকে ফিরত দাও। আমার সেগুলি দরকার নেই।

উম্মু সালামা বলেন  ঃ এভাবেআমর ও তার সংগীর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হল এবং তারা ভগ্ন হৃদয়ে পরাজিত ও হতাশ অবস্থায় দরবার থেকে বেরিয়ে গেল। আর আমরা উত্তম বাসগৃহে সম্মানিত প্রতিবেশীর মত নাজ্জাশীর নিকট বসবাস করতে লাগলাম।

অতঃপর জা’ফর ইবন আবী তালীব ও তার সহধর্মিনী নাজ্জাশীর আশ্রয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিতে পূর্ণ দশটি বছর অতিবাহিত করেন। সপ্তম হিজরীতে তাঁরা দু’জন এবং আরও কিছু মুসলমান  হাবশা থেকে ইয়াসবিরের (মাদীনা) দিকে রওনা হলেন । তাঁরা ও মদীনায় পৌঁছলেন, আর এদিকে রাসূল (সা ) জ’ফরকে দেখে এত খুশী হলেন যে তাঁর দ’চোখের মাঝখানে চুমু দিয়ে বললেন   ঃ আমি জানিনে, খাইবার বিজয় আর জ’ফরের আগমন - দু’টির কোনটির কারণে আমি খুশি।  

নবীনতর পূর্বতন