জা’ফর ইবন আবী তালীব-৭ম পর্ব


সাধারণভাবে সমগ্র মুসলিম সমাজ এবং বিশেষভাবে গরীব মুসলমানদের আনন্দ ও খুশী জা’ফরের আগমনে রাসূলুল্লাহর (সা) থেকে বিন্দুমাত্র কম ছিলনা। কারণ জা’ফর ছিলেন গরীব-মিসকীনদের প্রতি ভিষণ দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। এ কারণে তাকে ডাকা হত আবুল মাসাকীন বা মিসকীনদের পিতা বলে ।

 জা’ফর ইবন আবী তালীবের মদীনায় আসার পর একটি বছর কেটে গেল। অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে সিরিয়ার রোমান বাহিনীকে আক্রমণের জন্য রাসূল  (সা) সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন। যায়িদ বিন  হারিসকে সেনাপতি নিয়োগ করে তিনি বললেন   ঃ ‘যায়িদ নিহত হলে আমীর হবেল জা’ফর ইবন আবী তালীব । জা’ফর নিহত বা আহত হলে আমীর হবে আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। আর সে নিহত বা আহত হরে মুসলমানেরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করবে । 

মুসলিম বাহিনী জর্দানের সিরিয়া সীমান্তে‘মূতা’ নামক স্থানে পৌঁছে  দেখতে পেল, এক লাখ রোমান সৈন্য তাদের মুকাবিলার জন্য প্রস্তুত এবং তাদের সাহায্যের জন্য লাখম, জুজাম, কুদাআ, ইত্যাদি আরব গোত্রের আরও এক লাখ খৃষ্টান সৈন্য পেছনে প্রতিক্ষা করেছে । অন্যদিকে মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা মাত্র তিন হাজার । যুদ্ধ শুরু হতেই যায়িদ বিন হারিসা বীরের ন্যায় শাহাদাত বরণ করেন। অতঃপর জা,ফর বিন আবী তালীব তাঁর ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়েন।এবং শত্রু  বাহনী যাতে সেটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিজের তরবারী দ্বারা ঘোড়াটিকে হত্যা করে ফেলেন । তারপর পতাকাটি নিয়ে তুলে ধরেন রোমান বাহিনীর অভ্যন্তরভাগে বহু দূর পর্যন্ত প্রবেশ করে শত্রু নিধন কার্য চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় তার ডান হাতটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তিনি বাম হাতে পতাকা উঁচু করে ধরেন। কিছুক্ষনের মধ্যে তরবারির অন্য ইকটি আঘাতে তার বাম হাতটিও দেহ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। তবুও তিনি হাল ছাড়লেন না। বাহু দিয়ে  বুকের সাথে জাপ্টে ধরে তিনি ইসলামী পতাকা সমুন্নত রাখলেন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তরবারির তৃতীয় একটি আঘাতে তাঁর দেহটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। 

অতঃপর পতাকাটি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা তুলে নিলেন। শত্রু সৈন্যদের সাথে বীর বিক্রমে লড়তে লড়তে তিনিও তার দু’ই সাথীর অনুগামী হলেন। তারপর খালিদ বিন ওয়ালিদ পতাকা হাতে নিয়ে মুসরিম বহিনীকে উদ্ধার করলেন। 

এ যুদ্ধে হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমারও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন   ঃ জাফরের লাশ তালাশ করে দেখা গেল , শুধু তার সামনের দিকেই পঞ্চাশটি ক্ষত চিহ্ন । সারা দেহে নব্বইটির বেশী ক্ষত ছিল। কিন্তু তার  একটিও পিছনের দিকে ছিলনা। 

এ তিন সেনাপতির শাহাদাতের খবর শুনে রাসূল (সা) দারূণভাবে ব্যথিত হন। বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি তার চাচাতো ভাই জা’ফরের বাড়ীতে যান। তখন তার স্ত্রী আসমা স্বামীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি রুটির জন্য আটা বানিয়ে রেখেছেন। ছেলেমেয়েদের গোসল করিয়ে তেল মাখিয়েছেন এবং তাদেরকে  নতুন পোশাক পরিয়েছেন।

আসমা বলেন   ঃ পাতলা ও পরিষ্কার একখানা কাপড় দিয়ে পবিত্র মুখমণ্ডল ঢেকে রাসূলকে (সা)  আমাদের বাড়ীর দিকে আসতে দেখে আমার মনে  নানা রকম ভীতি ও শষ্কার উদয় হল।        

নবীনতর পূর্বতন