জা’ফর ইবন আবী তালীব | ৮ম-পর্ব

কিন্তু খারাপ শুনতে হয় এ ভয়ে আমি তাকে জা’ফর সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন ঃ ‘জা’ফরের ছেলেমেয়েদের আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাদের কে ডাকলাম। তারা খুশিতে বাগবাগ হয়ে কে আগে রাসূলের (সা) নিকট পৌঁছাবে এরূপ একটা প্রতিযোগিতা নিয়ে দৌড় দিল। রাসূল (সা) তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে লাগলেন । তখন তার দু’চোখ দিয়ে অঝারে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল । আমি বললামঃ ইয়া রাসূলল্লাহ! আমার মা বাবা আপনার প্রতি কুরবান হোক । আপনি কাদঁছেন কেন ? জা’ফর ও তার সংগী দু’জনের কোন দুঃসংবাদ পেয়েছেন কি ? তিনি বললেন ঃ হাঁ । আজই তারা শাহাদাত বরণ করেছেন। আর সেই মুহূর্তে ছোট্র ছেলে-মেয়েদের মুখের হাসি বিলণীন হয়ে গেল। যখন তারা শুনতে পেল তাদের মা কান্না ও বিলাপ করেছে, তারা নিজ নিজ স্থানে পাথরের মতো এমন স্থির হয়ে গেল , যেন তাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে । প্রতিবেশী মহিলারা এসে আসমার পাশে ভিড় করল । রাসূল (সা) চোখ মুচতে মুচতে বেরিয়ে গেলেন । বাড়ীতে পৌঁছে আযওয়াযে মুতাহহারতকে বললেনঃ আজ তোমরা জা’পরের পরিবারবর্গের প্রতি একটু নজর রেখ। তারা আজ চেতনাহীন।

হযরত জা’ফরের  শাহাদাতের পর দীর্ঘদিন ধরে রাসূল (সা) শোকাভূত ও বিমর্ষ ছিলেন।অবশেষে হযরত জীবরীল (আ) তাকে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহ তা’আলা জা’ফরকে তার দুটি কতির্ত হাতের পরিবর্তে নতুন দুটি রক্ত রাঙা হাত দান করেছেন। এবং তিনি জান্নাতে ফিরিশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে তার উপাদি হয়,‘যুল-জানাহাইন’ও ‘তাইয়ার --দ’ডানাওয়ালা  ও উড়ন্ত।

ইবন সা’দ তাঁর তাবাকাতে বর্ণনা করেন ঃ যায়িদ বিন হারিসা, জা’ফর ইবন আবী তালীব ও আবদুল্লাহইবন রাওয়াহার শাহাদাতের খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য তাদের পরিচয় তুলে ধরেও প্রশংসা করে এক সংক্ষিপ্ত খুতবা দেন এবং দুআ করেনঃ হে আল্লাহ আপনি যায়িদকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, আপনি যায়িদকে ক্ষমা করুন,  হে আল্লাহ, আপনি জা’ফর ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাকে মাফ করে দিন।

ইমাম আহমদ আবদুল্লাহ ইবন আসলাম থেকে বনার্ণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) জা’ফরকে বলতেন,‘সিরাত ও সুরাত---চরিত্র ও দৈহিক গঠনে তুমি আমার মত। 

হযরত জা’ফর ছিলেন গরীব  মিসকীনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়। আবু হুরাইরা (রা) বলেন,, “আমাদের মিসকীনস,সম্পদায়ের জন্য জা’ফর ইবন আবী তালীব ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তি। তিনি আমাদেরকেসংগে করে তার গৃহেনিয়ে যেতেন,যা কিছু তার কাছে থাকত তা আমাদের খাওয়াতেন। যখন তার খাবার শেষ হয়ে যেত তখন তার ছোট্র শূন্য ঘি-এর মশকটি বের করে দিতেন । আমরা তা ফেঁড়ে ভেতরে যা কিছ ‍ুলেগে থাকত চেটেচুটে খেতাম। রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন ‘আমার আগে যত নবী এসেছেন তাঁদের মাত্র সাতজন বন্ধু দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমার বিশেষ বন্ধর সংখ্যা চৌদ্দ এবং জা’ফর তার একজন। 

(বুখারি, মানাকিবু জা’ফর)।

নবীনতর পূর্বতন