উস্তাদের দোয়ার ফল : পর্ব-১ | সরলপথ.কম

 
বহুদিন আগের কথা ।

 

ছোট্ট এক বালক। খুবই গরীব অসহায়। প্রত্যহ সে গ্রামের মক্তবে পড়তে যায়। পা খালি। কারণ জুতো কেনার মত সামর্থ ও তার নেই। কিন্তু ছেলেটি ছিল অত্যন্ত মেধাবী ।

 

প্রচন্ড শীত পড়েছে। প্রতিদিনের মত আজও সে খালি পায়ে মক্তবে আসছে। উস্তাদ দেখলেন যে, ছেলেটি খালি পায়ে এই কনকনে শীতের মধ্যে হেটে আসছে। এতে তার সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটির কষ্ট দেখে উস্তাদ নিজেও মনে মনে ব্যথিত হলেন। তিনি ভাবলেন, সুন্দর ফুটফুটে এই মেধাবী ছাত্রটি পয়সার অভাবে এত কষ্ট স্বীকার করবে তা হতেই পারে না। তাই তিনি ক্লাস শেষে ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন । আমার কামরায় গিয়ে দেখ, খাটের নিচে এক জোড়া কাপড়ের জুতো আছে। এগুলো আমার নিকট নিয়ে এসো ।

 

জুতা নিয়ে আসার পর তিনি পকেট থেকে দু'আনা পয়সা বের করে তার হাতে দিয়ে বললেন,যাও আজ বাজারে গিয়ে এই পয়সা দিয়ে জুতো মেরামত করে আনবে এবং আগামী কাল সকালে এই জুতো পড়ে মক্তবে আসবে । কেমন ?

 

ছেলেটি বলল, ঠিক আছে হুজুর। এই বলে সে বাজারের দিকে রওয়ানা দিল ।

 

কিন্তু পথিমধ্যে সে চিন্তা করল, এই জুতো কার ? এগুলোতো আমার উস্তাদের । উস্তাদের জুতো ছাত্র ব্যবহার করবে তা কি কখনও শোভা পায়? না, তা কিছুতেই শোভা পায় না। উপরন্তু এর দ্বারা উস্তাদের সাথে বেয়াদবী হবে। তার সম্মানের হানি হবে।

 

তাহলে এখন কি করা যায়? এ চিন্তা করতে করতে সে ধীর পদে বাজারের দিকে এগুচ্ছিল ।

 

হঠাৎ তার মাথায় এক সুন্দর বুদ্ধি আসল এবং উস্তাদের যথার্থ সম্মানের জন্য এটিই উপযুক্ত হবে মনে করে তা-ই করার সিদ্ধান্ত নিল। 

 

সে তার নতুন চিন্তা মোতাবেক বাজার থেকে এক আনার সোড়া কিনল। তারপর বাড়িতে গিয়ে গরম পানির মধ্যে সোড়া মিশিয়ে তার মধ্যে কাপড়ের জুতাগুলো ছেড়ে দিল। এতে একটু অল্প সময়েই মধ্যেই জুতোর উপরের কাপড়গুলো খসে আলাদা হয়ে গেল । অতঃপর সে ঐ কাপড়গুলো শুকিয়ে দর্জির কাছে নিয়ে গেল এবং অবশিষ্ট পয়সাটি দিয়ে একটি টুপি বানাল ।

 

পরদিন সকালে ঐ টুপি মাথায় দিয়ে সে আগের মতোই খালি পায়ে মক্তবে রওয়ানা হল। এদিকে উস্তাদ রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন, কখন আদরের ছাত্রটি তার দেয়া জুতা পরিধান করে মক্তবে আসবে। ইত্যবসরে সেই ছাত্র এসে হাজির। কিন্তু পায়ে জুতো নেই। আগের মতোই খালি । তখন তিনি খুব রাগান্বিত হলেন এবং নিজ কামরায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লেন।

 

ছাত্রটি সবই বুঝতে পারল। তাই সে দরজায় দাঁড়িয়ে খুব বিনয়ের সাথে বলল, হুজুর মেহেরবানী করে একটু দরজাটি খুললে ভাল হয়। আমি ভিতরে আসতে চাই। আপনার সাথে একটু কথা বলব।

নবীনতর পূর্বতন