উস্তাদের দোয়ার ফল : পর্ব-২ | সরলপথ.কম


উস্তাদজী দরজা খুলে দিলে সে ভিতরে প্রবেশ করল। এমন সময় উস্তাদ তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, সে কাঁদছে। চোখ দিয়ে অবিরাম গতিতে অশ্রু ধারা বের হয়ে দু গাল ভিজে যাচ্ছে। ছেলেটির কান্না দেখে তার রাগ অনেকটা কমে গেল। তিনি বললেন , বাবা কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার খুলে বল।

 
ছেলেটি তখন চোখ মুছতে মুছতে বলল, উস্তাদজী আপনি মনে হয় অনেক কষ্ট পেয়েছেন এবং আমার উপর রাগ করেছেন। অনুগ্রহ পূর্বক আমার উপর রাগ করবেন না। কারণ আপনি আমাকে যে জুতো দিয়েছিলেন তা মেরামত করতে বাজারে যাওয়ার সময় আমি ভাবলাম যে, এটি তো আমার উস্তাদের জুতো। তিনি এ জুতো বহুদিন ব্যবহার করেছেন। আমি ছাত্র হয়ে এ জুতো কিভাবে ব্যবহার করব?এটা কিছুতেই আমার জন্য শোভা পায় না। তাই আমি আপনার দেয়া দু'আনা পয়সার একটি দিয়ে সোডা ক্রয় করেছি এবং তা দিয়ে জুতো থেকে কাপড়গুলো আলাদা করছি। অতঃপর অবশিষ্ট এক আনা দিয়ে দর্জিকে বলে উক্ত কাপড়গুলো দিয়ে একটি টুপি বানিয়েছি। যাতে উস্তাদের সম্মান ও মর্যাদা বজায় থাকে। আপনি আমার মাথায় এখন যে টুপি দেখছেন, এটিই হল সেই টুপি।
 
এতদশ্রবণে উস্তাদের মন আনন্দে ভরে উঠল। সীমাহীন খুশি তাঁর রাগ ও ব্যথার স্থানকে দখল করে নিল।
 
তিনি বললেন, তুমি যে এতখানি ভেবেছ, তা আমি মোটেও চিন্তা করিনি। এই বলে আনন্দের আতিশায্যে তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেই দোয়া করলেন। তিনি দোয়ার মধ্যে বললেন-হে পরওয়ার দিগার! আপনি আমার এই ছাত্রকে ভবিষ্যতে একজন বড় ইমাম বানিয়ে দিন। আমাকে আপনি যতটুকু সম্মান দিয়েছেন তাকে এর চেয়েও বেশী সম্মান দান করুন।
 
উস্তাদের এই দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে গেল। পরবর্তিতে দেখা গেল, আল্লাহ তায়ালা ঐ ছাত্রকে এতবড় বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম বানিয়ে দিলেন, মুসলিম বিশ্বের প্রধান চার জন ইমামের মধ্যে যার অনুসারীর সংখ্যা বেশী।
 
তিনি হলেন হযরত নোমান বিন সাবেত (রহঃ)। যিনি সারা বিশ্বে ইমামে আযম আবু হানিফা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
 
তাই প্রত্যেকটি ছাত্রের উচিত, উস্তাদের যথাযথ সম্মান রক্ষা করে চলা। তাঁর সাথে অত্যন্ত আদবের সাথে নম্রভাবে কথা বলা। তার খেদমতকে নিজের সৌভাগ্যের ওসীলা মনে করা। সর্বোপরি তিনি যেন খুশি থাকে সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা । হযরত থানভী (রহঃ) প্রায়ই বলতেন, কোন ছাত্র তার উস্তাদকে যে পরিমাণ খুশি রাখতে পারবে তার ইলমের মধ্যে সেই পরিমান বরকত হবে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে একটি হরফও শিক্ষা দিলেন আমি তার গোলাম হয়ে গেলাম। সুতরাং এখন ইচ্ছা করলে তিনি আমাকে আযাদও করে দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে বিক্রিও করে দিতে পারেন।
 
আল্লাহ তায়ালা সকল ছাত্র ভাইকে উস্তাদের খেদমত করার, তাদের মন খুশি রাখার এবং যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন ।

নবীনতর পূর্বতন