অবাধ্য স্ত্রীর ভয়াবহ পরিণাম : পর্ব-২ | সরলপথ.কম

 

কিছুক্ষণের মধ্যে এ সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন তাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে তার বাড়ীতে সমবেত হতে লাগল। এদিকে উক্ত মহিলা তার সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে জান্নাতী মহিলার স্বামীকে খোঁজছিল। হঠাৎ লােকজনের ভীড়ে তাকে পেয়ে গেল । জান্নাতী রমনীর স্বামীর পরিচয় আগেই জানা ছিল বিধায় বহু লোকের মাঝেও তাকে চিনে বের করতে তার তেমন কোন কষ্ট হল না। অতঃপর সে জান্নাতী মহিলার স্বামীকে কাছে ডেকে আনল এবং তার স্ত্রীর সকল অবস্থা খুলে খুলে বর্ণনা করল।

স্ত্রীর শাস্তির কথা শ্রবণ করে স্বামীর মনে দয়ার উদ্রেক হল। ফলে সে স্ত্রীর দেয়া সকল দুঃখ-বেদনা ভুলে গিয়ে তাকে মাফ করে দিল। অতঃপর সকলেই যার যার গৃহে প্রত্যাবর্তন করল।

ঐ দিন রাতে ঘুমানাের পর মহিলা স্বপ্নে দেখল যে, দ্বিতীয় রমনী প্রথম রমনীর ন্যায় সুখ, শান্তি ও আনন্দে রয়েছে। এখন তার কোন প্রকার শান্তি হচ্ছে না। তার মনে কোন দুঃখ-কষ্ট নেই।

জান্নাতী মহিলাটি দানকৃত মহিলাকে বলল, আল্লাহু তায়ালা তােমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। কারণ তােমার কারণে আমি কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি। ঘটনা এখানেই শেষ। | এবার অধম লেখকের পক্ষ থেকে মা-বােনদের প্রতি সবিনয় আরজ এই যে, আপনারা যারা স্বামীর মনে কষ্ট দেন, স্বামীর শরীয়ত সম্মত আদেশ নিষেধ পালনে ত্রুটি করেন, তাকে শান্তি দেওয়ার পরিবর্তে অশান্তি দেন, তার খেদমত করাকে স্বীয় ইজ্জতের পরিপন্থী কাজ মনে করেন, তিনি আপনার মত সুন্দর কিংবা শিক্ষিত না হওয়ার কারণে সর্বদা তাকে তাচ্ছিলাে চোখে দেখেন, আপনার চাহিদা মত খাওয়া-পরা দিতে পারছে না বলে সর্বদা তাকে কথায় কাজে হেয় প্রতিপন্ন করেন তারা এই ঘটনা পাঠ করে আজ থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন যে, আমরা আর কখনো স্বামীর মনে কষ্ট দিব না। তার আদেশ নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। জান্নাতী মহিলা যেভাবে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামতের অধিকারীনী হয়েছিল আমরাও আর কাল বিলম্ব না করে আজকেই রাতের নির্জন প্রহরে স্বামীর পা ধরে অতীতের সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে তাকে খুশী করার জন্য সচেষ্ট হব। তার সাথে আর কোনদিন দূর্ব্যবহার করব না।

যদি কোন দিন আবারো কোন কথা বা কাজের দ্বারা স্বামীর মনে কষ্ট পায়, তাহলে এক মুহূর্তও দেরী না করে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিব। তার মনে সর্বদা হাসি ফুটাতে চেষ্টা করব। তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করবেন তখন তার দেয়া সকল দুঃখকে চেপে রেখে হাসি মুখে তাকে বরণ করে নিব। বাহিরে তার কোন কষ্ট হয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করব। ওজু-গােছলের প্রয়ােজন হলে ও গােছলের পানির ব্যবস্থা করব। মেছওয়াক, তােয়ালে, গামছা ইত্যাদি এগিয়ে দিব। রাতে শোয়ার সময় সুন্দর করে বিছানা পরিস্কার করে দিয়ে মশারী খাটিয়ে দিব। 
 
আর একথা খুব ভাল করে মনে রাখব যে, স্বামীর মন খুশী রেখে তার পক্ষ থেকে যা কিছু পাওয়া সম্ভব তার মনে কষ্ট দিয়ে কস্মিন কালেও তা পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি আমার জন্য কোন কিছু সখ করে কিনে আনলে তা আমার পছন্দ না হলেও উহাকে সাদরে গ্রহণ করব। তা হলে অন্যদিন হয়তাে আমি যে জিনিষ পছন্দ করি সেরূপ জিনিস এনে দিবেন। আমার নিজস্ব প্রয়ােজনীয় কোন জিনিষ আনার জন্য যথা সম্ভব তাকে ফরমায়েশ করবো না। অবশ্য তিনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তােমার কোন কিছু লাগবে কি? তখন তাঁর সামর্থের প্রতি খেয়াল রেখে নিজের অতি জরুরী জিনিযুগুলির কথা তার সামনে পেশ করব। যদি তিনি আমার হক ঠিকমত আদায় না করেন কিংবা কাজে-কর্মে আমাকে কষ্ট দেন। তাহলে আমি সবর করব এবং আল্লাহর কাছে এর ছওয়াবের প্রত্যাশা করব।
 
তাকে আমি কখনো শাসন করতে যাব না। কেননা তাকে শাসন করার অধিকার ইসলাম আমাকে দেয়নি। হ্যাঁ, তাকে বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পথে আনার চেষ্টা করব। তিনি নামায, রােজা ও শরীয়তের অন্যান্য বিধি বিধান ঠিকমত পালন না করলে তাকে এ সমস্ত আমলের ফজীলত বার বার শুনাতে থাকব এবং নিজেও এগুলাের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখব। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে তার জন্য খোদার দরবারে দোয়া করব। এতে আশা করা যায়। যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর অন্তরকে ঘুরিয়ে দিবেন এবং তাকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করবেন।

যে সকল মা-বােনের স্বামীকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও পথে আনতে পারছেন না তাদের নিকট লেখকের অনুরােধ এই যে, আপনারা আপনাদের স্বামীদেরকে তাবলীগ জামাতে ১চিল্লা বা ৩ চিল্লার জন্য পাঠিয়ে দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ অতি অল্প দিনের মধ্যে তাদের মাঝে বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। এটা বহু পরীক্ষিত আমল।

পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কয়েকখানা হাদীছ উল্লেখ করে চলমান আলােচনার সমাপ্তি টানছি।

১। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মহিলা স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যু বরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাত-২৮১, ইব্রুনো মার্ক্সা)

২। হযরত আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে রমজান মাসে রােজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং শতরীয় সম্মত কাজে স্বামীর বাধ্যগত থাকে তার জন্য সুসংবাদ যে, সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (তাবরানী)

৩। হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ মহিলার নামায কবুল হয় না যার প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট: যতক্ষণ না সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে।

৪। হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মহিলা তার স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তার উপর আল্লাহর লা'নত পতিত হয়। (দাইলামী)

৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওহে মহিলারা! জেনে রেখ তােমার স্বামীই তােমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ তােমার স্বামী তােমার উপর খুশী থাকলে তুমি জান্নাত লাভ করবে এবং নাখােশ থাকলে তুমি জাহান্নাম ভােগ করবে। (তাবাকাতে ইবনে সায়াদ)
নবীনতর পূর্বতন