অবশেষে আমার হিংস্রতাই বিজয়ী হল। আমার পশুত্ব আর আত্ম অহমিকা আমাকে অন্ধ করে ফেলল। সিদ্ধান্ত নিলাম, লাঞ্চন-অপমান ও কলংকের এই চিহ্নকে আজই সমাধিস্থ করে আত্ন প্রশান্তি লাভ করবো । স্ত্রীকে বললাম, মেয়েটিকে আজ সাজিয়ে দাও। ওকে এক নিমন্ত্রণে সাথে নিয়ে যাব। স্ত্রী তাকে সুন্দর জামা পরিয়ে উত্তমরূপে সাজিয়ে দিল। আব্বার সাথে নিমন্ত্রণে যাওয়ার সংবাদে সে আনন্দে আত্মহারা।
আমি তাকে নিয়ে এক পাথুরে জমীনের দিকে রওয়ানা হলাম। মেয়েটি তখন আনন্দের আতিশায্যে লাফিয়ে লাফিয়ে কখনও আমার সামনে, কখনও আমার পিছনে আবার কখনও আমার হাত ধরে হাটছিল। কিন্তু সে জানত না যে, আমার মধ্যে তখন পশুত্বের কি পৈশাচিক ঝড় বইছিল। আমি তখন ছিলাম অন্ধ-মুক-বধির। তার হর্য-উল্লাস, কল কণ্ঠের আব্বু আব্বু ডাক কিছুই আমাকে প্রভাবিত করছিল না। এভাবে চলতে চলতে দূরে জনমানব শূন্য এক স্থানে গিয়ে থামলাম এবং দ্রুত গর্ত খুঁড়তে লাগলাম। আমার কাণ্ড দেখে বিস্মিত হয়ে মেয়েটি বলল! 'আব্বু এ পাথুরে জায়গায় গর্ত করছেন কেন? নিমন্ত্রণে যাবেন না?
গভীর গর্ত খনন শেষে আমি উপরে উঠে আসলাম এবং সাথে সাথে সেই সদাহাস্য মমতাময়ী কন্যাটিকে শুন্যে তুলে গর্তে নিক্ষেপ করলাম তারপর দ্রুত মাটি ফেলে গর্তটি ভরতে লাগলাম। এ সময় মেয়েটি অশ্রু সজল নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আর্ত-চিৎকার করে বলছিলো, আব্বু ,আব্বু , আপনি একি করছেন আব্বু ? আব্বু ! আমি তো কোন দোষ করিনি তবে কেন আমাকে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিচ্ছেন ?
ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি তখন এত নিষ্ঠুর ও নির্মম হয়ে গিয়েছিলাম যে এ আর্ত-চিৎকারে আমার পাষাণ হৃদয়ে একটু ও দয়ার উদ্রেক হয়নি। আমি যেন তখন উন্মাদ হয়ে পড়েছিলাম। তাইতো আমি আপন কন্যাকে জীবিত সমাধিস্থ করে ব্যাথার পরিবর্তে পৈশাচিক উল্লাস আর সীমাহীন প্রশান্তি নিয়ে বাড়ীতে ফিরতে পেরেছিলাম ।
এ নিষ্ঠুর , নির্মম ও মর্মস্পর্শী কাহিনী শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চক্ষু থেকে টপ টপ করে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো । গুমড়ে কেঁদে উঠছিলেন তিনি। আর বলছিলেন, যারা অন্যের প্রতি দয়াবান নয় আল্লাহ কিভাবে তাদের প্রতি দয়াশীল হবেন ?