বনু তামীম গোত্রের সর্দার কায়েস বিন আছিম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূলের নিকট স্বহস্থে কন্যা সমাধিস্থ করার এক মর্মস্পর্শী করুণ কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন -
ইয়া রাসূলাল্লাহ! একবার আমি সফরে গিয়েছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে আমার একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। অবশ্য আমি বাড়িতে থাকলে তার কান্নার আওয়াজ শুনার সাথে সাথেই গর্তে পুঁতে তার আওয়াজ চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিতাম। কিন্তু আমার স্ত্রী তাকে। মাতৃস্নেহ দিয়ে লালন পালন করতে থাকে। কিছুদিন পর তার মাতৃমমতা এত প্রবল আকার ধারণ করে যে, আমার নিমর্মতার ভয়ে সে তাকে তার খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। উদ্দেশ্য হল, হয়তো খালার স্নেহে লালিত পালিত হয়ে একটু বড় হলে পিতার হৃদয়েও দয়া-মায়ার উদ্রেক হবে এবং ফুটফুটে নিস্পাপ শিশু কন্যাটি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে আমার কন্যাটি তার খালার স্নেহে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। একদিন বিশেষ কারণে আমি বাইরে কোথাও গিয়েছিলাম। এই সুযোগে আমার স্ত্রী মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়িতে ঢুকেই দেখি, একটি সুন্দর সুদর্শন চঞ্চল শিশুকন্যা সমস্ত ঘরময় ছুটাছুটি করছে মেয়েটিকে দেখে স্বর্গীয় এক মায়ার পরশে আমার হৃদয় মন ভরে গেল। আনন্দে চোখ দুটি চিকচিক করে উঠল। আমি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত স্থির দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এদিকে আমার চেহারা দেখে আমার স্ত্রী আঁচ রাতে পারল যে, পাষাণ হৃদয়ে পিতশ্নেহের বান ডেকেছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? কার মেয়ে? ভারী চমৎকার তো ! তার মায়া আমায় হৃদয় মন জয় করে ফেলেছে।
স্ত্রী ভাবল, এখন আর কোন ভয় নেই। তাই সে আমার নিকট সব কিছু খুলে বলল।
মেয়েটি আমার জানতে পেরে অবলীলাক্রমে স্নেহভরে আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম। আনন্দের আতিশায্যে
বারবার চুমু খেলাম। এ সময় মেয়েকে লক্ষ্য করে স্ত্রী বলল, মা! এ যে তোমার আব্বু! অমনি
সে আব্বু আব্বু বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল। সে যে কি সুখ কি আনন্দ ! তা ভাষায় প্রকাশ করা
অসম্ভব। ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরপর থেকে আমি তাকে কাছে ডাকলে আব্বু আব্বু বলে কোলে ঝাপিয়ে
পড়ত আর আমি তাকে বুকে চেপে ধরে স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করতাম।