অবাধ্য স্ত্রীর ভয়াবহ পরিণাম : পর্ব-১ | সরলপথ.কম

 Abadhya-strir-bhayabaha-parinam

জনৈক মহিলার প্রাণের চেয়ে প্রিয় একটি পুত্র সন্তান ছিল। সে তার ছেলেকে বুকভরা দরদ ও সীমাহীন আদর-সােহাগ দিয়ে লালন-পালন করত। ধীরে ধীরে ছেলেটি বড় হল। সে যখন কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পন করল তখন হঠাৎ একদিন ভীষণ রােগে আক্রান্ত হল। স্নেহময়ী মা স্বীয় সন্তানকে রােগমুক্ত করার কোন চেষ্টাই ৰাকী রাখল না। কিন্তু কিছুতেই সে সুস্থ হল না।
 
শেষ পর্যন্ত মা উপায়ান্তর না দেখে প্রিয় পুত্রকে মৃত্যুর ছােবল থেকে বাঁচানোর জন্য মান্নত করল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি যদি আমার পুত্রকে রোগ মুক্ত কর তাহলে আমি সাত দিন জীবন্ত অবস্থায় কবরে থাকব। অতঃপর সে ছেলের জন্য কেঁদে-কেটে কায়মনােবাক্যে খােদার দরবারে প্রার্থনা করল। আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন এবং ছেলেকে পূর্বের ন্যায় সুস্থ করে দিলেন।

এখন মান্নত পুরা করার পালা। কিন্তু সে তার মান্নত পুরা করল না । এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হল।

একদিন রাতের ঘটনা। মহিলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ সে স্বপ্নে দেখল, একজন সুন্দর ও সুদর্শন পুরুষ তাকে লক্ষ্য করে বলছে, তুমি অতি শীঘ্র তােমার মান্নত পূর্ণ কর নইলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তােমার উপর এর চেয়েও কঠিন বিপদ নেমে আসবে।

স্বপ্ন দেখে মহিলা ঘাবড়ে গেল। ভােরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় সে তার আদরের ছেলেকে স্বপ্নের কথা জানাল এবং বলল, তুমি এক্ষুণি কবরস্থানে গিয়ে আমার জন্য একটি কবর খনন কর।

মমতাময়ী মায়ের নির্দেশ পালনার্থে ছেলে কবরস্থানে গেল এবং মাকে দাফন করার জন্য সুন্দর একটি কবর খনন করল।

অতঃপর সে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করে মাকে কবর খননের সংবাদ দিল । মা স্বীয় মান্নত পূর্ণ করার জন্য কবরে অবতরণ করে শুয়ে পড়ল এবং বলল, ওহে প্রভু! আমি আমার সকল ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে মান্নত পূর্ণ করার চেষ্টা করছি। এখন আপনি আমাকে কবরে আগত যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে হেফাযত করুন। দোয়া শেষ হলে ছেলেটি কবরে মাটি দিয়ে ব্যথিত হৃদয়ে মলিন মুখে বাড়ীতে চলে এল।

মহিলাটি নিঃসঙ্গ অবস্থায় কবরে শুয়ে আছে। এমতাবস্থায় হঠাৎ সে মাথার দিকে ছােট্ট একটি সুড়ঙ্গপথ দেখতে পেল। এতে সে সীমাহীন 'আশ্চর্য হল। সে দেখল, দূর থেকে দুজন জান্নাতী মহিলা তাকে কাছে আসার জন্য আহবান করছে।

মহিলাটি জান্নাতী রমনীদ্বয়ের আহবানে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে সামনে অগ্রসর হল এবং তাদের নিকটে এসে সালাম দিল। কিন্তু তারা উত্তর দিল না। মহিলা বলল, আপনারা বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সালামের জবাব দিলেন না। কেন? তারা বলল, নিঃসন্দেহে সালাম অনেক পূণ্যের কাজ। কিন্তু আমাদেরকে সালামের উত্তর দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই সালামের উত্তর দেইনি।

সে দেখলাে, বেহেশতী রমনীদ্বয়ের একজনের মাথায় একটি পাখি ডানা ঝাপটিয়ে বাতাস দিচ্ছে এবং অপর রমনীর মাথায় অন্য একটি পাখি তার তাঁ ও ধারাল ঠোট দিয়ে বারবার সজোরে আঘাত করছে। অতঃপর বাকী ঘটনা সে এভাবে বর্ণনা করলাে যে

আমি এ দৃশ্য দেখে প্রথম রমনীকে জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ তায়ালা কোন আমলের বিনিময়ে আপনাকে এ নেয়ামত দান করেছেন? সে বলল, আমি পৃথিবীতে স্বামীর একান্ত বাধ্যগত ছিলাম। সদা সর্বদা তার মন সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টায় লিপ্ত থাকতাম। তার শরীয়ত সমর্থিত সকল প্রকার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। তিনি মনে কষ্ট পাবেন এ ধরণের কোন কথা তার সামনে কখনাে উচ্চারণ করতাম না। ফলে অন্তিম কালে তিনি আমার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতিদান স্বরূপ আমাকে এই অফুরন্ত নিয়ামত ও মর্যাদা দান করেছেন।

অতঃপর আমি দ্বিতীয় রমনীকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ অনাবিল শান্তির নীড়ে আপনার এ দুরবস্থা কেন? আপনি এমন কি অপরাধ করেছেন যার ফলে এ পাখিটা আপনার মাথায় বসে তার ধারালো ঠোট দিয়ে আপনার মাথা ঠোকরাচ্ছে এবং আপনাকে সীমাহীন কষ্ট দিচ্ছে? সে বলল, আমি দুনিয়াতে আল্লাহ তালার আদেশ নিষেধ যথাযথ পালন করেছি সত্য কিন্তু স্বামীর সাথে সদাচরণ ও মধুর ব্যবহার করিনি। আমি তার সন্তুষ্টির পরােয়া করতাম না। কথায় কথায় তার মনে কষ্ট দিতাম । আমি তার নির্দেশ পালনের প্রতি কোনরূপ গুরুত্বারােপ করতাম না। ফলে মৃত্যুকালে তিনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইবাদতের বিনিময়ে জান্নাত দান করেছেন আর স্বামীকে অসন্তষ্ট করার কারণে আমাকে এ ভয়াবহ, শাস্তি প্রদান করেছেন।

অতঃপর জান্নাতী মহিলা দাফনকৃত মহিলাকে বলল, হে বােন! আমি তােমার নিকট একটি সবিনয় আবেদন করছি। তা এই যে, যখন তুমি মান্নতের মেয়াদ শেষ করে দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করবে তখন বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক লোক তােমাকে দেখার জন্য আসবে। তাদের মধ্যে হয়তাে আমার স্বামীও থাকবে। অতঃপর জান্নাতী মহিলা তার স্বামীর পরিচয় দিয়ে বলল, তুমি আমার এ ভয়াবহ শাস্তির কথা তার কাছে খুলে বলবে এবং আমার পক্ষ থেকে তার নিকট ক্ষমার আবেদন করবে। হতে পারে তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

সাতদিন অতিবাহিত হওয়ার পর জান্নাতী মহিলাদ্বয় বলল, তুমি তোমার কবরে চলে যাও। মহিলাটি যখন কবরে প্রবেশ করল তখন সে দেখতে পেল, তার প্রিয় ছেলে কবর খনন করছে। ছেলে কবর খনন করে স্নেহময়ী মাকে জীবিত অবস্থায় পুণরায় দেখতে পেয়ে অত্যন্ত খুশী হল এবং তাকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো।
নবীনতর পূর্বতন