নাম রিয়াদ। বয়স ৩২। শহরের ব্যস্ত জীবনে সে একজন সফল ব্যবসায়ী। টাকা, গাড়ি, বিলাস – সবই ছিল তার জীবনে। কিন্তু যেটা ছিল না, তা হলো নামাজ, ইবাদত আর আল্লাহর ভয়। ইসলামের প্রতি দূরত্বটা যেন ধীরে ধীরে একটা দেয়াল তৈরি করেছিল। তার পরিবার মাঝে মাঝে বলত, “বাবা, অন্তত জুমার নামাজ তো পড়ো।” কিন্তু সে হেসে উড়িয়ে দিত, “আল্লাহ আমাকে ভালোই রেখেছে, নামাজ না পড়েও তো ঠিক আছি!”
একদিন রিয়াদ হঠাৎ বুকের ব্যথা অনুভব করে। হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক জানায় – হার্টে সমস্যা ধরা পড়েছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। রোগ শোনার পর প্রথমবারের মতো রিয়াদের মনে প্রশ্ন জাগল – "এই জীবন কি চিরস্থায়ী?" হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তার চোখে ভেসে উঠল ছোটবেলার মক্তব, কুরআনের আয়াত, বাবার কাঁদো কাঁদো মুখে নামাজের তাগিদ।
সেই রাতেই সে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে – যেন সে অন্ধকার এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এক আলো ঝলমলে জায়গা, যেখানে নামাজি মানুষরা যাচ্ছে, কিন্তু তাকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি কণ্ঠ বলছে, “তুমি তো কখনো সিজদা করোনি, এই আলো তোমার জন্য নয়।”
ঘুম ভেঙে রিয়াদ চিৎকার করে উঠে বসে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে সে বিছানাতেই অজু করে নেয় এবং জীবনের প্রথম বার মন থেকে দুই রাকাত নামাজ পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে সে আল্লাহর কাছে মাফ চায়।
সার্জারির আগের রাতে সে মা-বাবার হাতে ধরে বলে, “দোয়া করো, আমি যদি বেঁচে ফিরি, তাহলে জীবনটাকে আল্লাহর পথে বদলে ফেলবো।” তার চোখে ছিল সত্যিকারের অনুশোচনা।
সার্জারি সফল হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে। তারপর থেকে রিয়াদ আর আগের রিয়াদ থাকে না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, দান-সদকা, পবিত্র জীবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। তার অফিসে সে একটি ছোট নামাজের জায়গা তৈরি করে, আর বলেন, “জীবনে যা কিছু পেয়েছি, তা আল্লাহর দান, এখন ফিরিয়ে দেওয়ার সময়।”
একদিন এক আত্মীয় জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কেন হঠাৎ এত বদলে গেলে?”
রিয়াদ হেসে উত্তর দেয়, “কারণ আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। মৃত্যুর আগে অন্তত একবার সিজদা করেই যেন যেতে পারি – এখন এটাই চাওয়া।”
শিক্ষা:
জীবনে কখন যে পরিবর্তনের ডাক আসে, কেউ জানে না। মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ে, তখনই মানুষ সত্যিকারের চিন্তা করে – "আমি কি প্রস্তুত?" তাই দেরি নয়, ফিরে আসুন আল্লাহর পথে, যতদিন সময় আছে।