অপূর্ব আত্নদান : পর্ব-১ | সরলপথ.কম

 
বদর যুদ্ধের চরম পরাজয়ের পর মক্কা নগরীতে সেই যে শোকের ছায়া নেমেছে আজো তা মুছেনি। কাফির মুশরিকরা আজও ভুলতে পারেনি তাদের সেই পরাজয়ের গ্লানি। মনে হয়, এ পরাজয় যেন তাদের জীবন থেকে চিরতরে কেড়ে নিয়েছে সকল হাসি আর আনন্দ-উল্লাস। বিষাদময় মক্কার আকাশে বাতাসে এখন আর আগের চঞ্চলতা নেই। নেই মরুচারী যাযাবরদের দুরন্তপনা।
 
কিন্তু একটি ঘোষণা হঠাৎ করেই মক্কার সর্বত্র নতুন করে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল। চতুর্দিকে বয়ে চলল হর্ষ-উল্লাসের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার । এইতো কিছুক্ষণ পূর্বে দফ বাজিয়ে ঘোষনা করা হল, মুহাম্মদের এ চরটিকে আজ শূলে চড়ানো হবে, বদর যুদ্ধে যে হারিছ বিন আমেরকে হত্যা করেছিল। ঘোষণা শুনে সকলেই দৃশ্যটি উপভোগ করার জন্য ছুটে চলল।
 
তানঈনের বিশাল প্রান্তর। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে মক্কার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই সেখানে সমবেত হয়েছে। প্রতি হিংসার পাশবিক আনন্দ সকলের চোখে মুখেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
 
জনতার ভীড়ের মাঝে সকল প্রকার কটাক্ষ ও হৈ-হুল্লোর উপেক্ষা করে বন্দী খুবাইব (রাঃ) নিশ্চিন্তে নির্বিকার দাড়িয়ে আছেন। যেন ভাবনার এক নতুন জগতে হারিয়ে গেছেন তিনি। তার সামনেই স্থাপিত হল শূল-কাষ্ঠ।একটু পরেই তার জীবন প্রদীপ চিরদিনের জন্য স্তব্দ হয়ে যাবে। অথচ কি আশ্চর্য! তার চেহারায় কোন ভয়ের ছাপ নেই, নেই হীম-শীতল মৃত্যুর ভয়াল বিভীষিকার আতংকে কোন বিষন্নতা। কিংবা বিচলিত হওয়ার ক্ষীণতম লক্ষণ। জীবন-মুত্যুর এই সন্ধিক্ষণে এক মুশরিক বীর ধীর পদে এগিয়ে এসে হযরত খুবাইব (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলল, হে পিতৃ পুরুষের ধর্ম ত্যাগকারী ! তোমার জীবন লীলা এখনই সাঙ্গ হবে । চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে তোমার হৃদয়স্পন্দন । এই অন্তিম মুহুর্তে তোমার কোন বাসনা আছে কি?
 
খুবাইব (রাঃ) মুখ তুলে প্রশ্নকারীর দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ। দুনিয়া থেকে বিদায়ের এবং আপন প্রভুর সাথে মিলিত হওয়ার সময় সন্নিকটে। কাজেই আমাকে দু'রাকাত নামায পড়ার সুযোগ দাও।
 
কাফির মুশরিকদের নিদ্রি বেষ্টনীর মাঝে অন্তিম আকাঙ্খা পূরণের জন্য খুবাইব (রাঃ) নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। খোদা প্রেমের কি অপূর্ব দৃশ্য! যেন স্বীয় সত্তাকে হারিয়ে বহুদূরে কোথাও চলে গেছেন। যেন গোপন অভিসারে প্রেমাস্পদের কানে কানে প্রেমকথা বলছেন । জীবনের সঞ্চিত সব প্রেম-ভালবাসা, ভক্তি শ্রদ্ধা প্রভুর সমীপে উজাড় করে দিচ্ছেন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে ।
নবীনতর পূর্বতন