নাহিদা নামের পনের-ষোল বছরের এক মেয়ে । খুবই দীনদার। তার দীনদারির ব্যাপারে
কম বেশী সবাই জানতো। তাই সকলেই তাকে স্নেহের চোখে দেখতো । সবাই তাকে আদর করতো ।
একদিন নাহিদার আব্বা আধুনিক শিক্ষিত এক যুবকের সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে
দিল । ছেলেটি ছিল যেমনি বদ মেজাজী তেমনি অত্যাচারী । বিয়ের কিছুদিন অতিবাহিত হতে না
হতেই সে নাহিদার গায়ে হাত তুলতে লাগলো । সামান্য কারণেই সে তার উপর হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়তো
। প্রতিদিন মদ পান করে রাত ১২টা ১ টার দিকে ঘরে ফিরতো । নাহিদা স্বামীর এ সকল অত্যাচার
সহ্য করে নীরবে চোখের পানি ফেলতো এবং প্রত্যেক নামাজের পর কায়মনোবাক্যে খোদার দরবারে দোয়া করে বলতো
“হে খোদা ! তুমি
আমার স্বামীর আখলাক সুন্দর করে দাও । তাকে নামাযী ও দীনদার বানিয়ে দাও। হে পরওয়ারদিগার!
মানুষের অন্তরতো তোমারই হাতে । তুমি ইচ্ছা করলে যেমন পাহাড়কে পানিতে পরিবর্তন
করতে পার তেমনি আল্লাহ ভালো পথভ্রষ্ট মানুষকেও সৎ পথে পরিচালিত করতে পার । তোমার অসাধ্য
কিছুই নেই খোদা । অনুগ্রহ পূর্বক তুমি আমার স্বামীকে হেদায়েত দান কর, সুপথে পরিচালিত করো।"
এভাবে দু'বছর যাবত নাহিদা স্বামীর জন্য দোয়া করে আসছে । শুধু দোয়াই
নয়, সুযোগ মত সে স্বামীকে কুরআন হাদীছের কথা বলে অনেক বুঝিয়েছে । তাবলীগ জামাতে গেলে
মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে একথা জানতে পেরে সে স্বামীকে জামাতে বের হওয়ার জন্য বার বার উৎসাহিত করেছে
। কিন্তু কিছুতেই কোন ফল হয়নি । উপরন্তু তার স্বামী জবাবে বলেছে, আরে! জামাতে গেলে,
নামাজ রোজা করলে কি লাভ হবে। নিজের মনমতো আনন্দের সাথে দুনিয়ার জীবনটা কাটিয়ে দেই এটাইতো ভাল ।
পরে যা হবার হবে।
নাহিদার স্বামী এক সরকারী অফিসে চাকরী করতো । অফিসের সন্নিকটে একটি বিশাল
মসজিদ ছিল । নামাজের সময় মসজিদ থেকে ভেসে আসতো আযানের সুমধুর ধ্বনি। নামাযের এই আহবানে
অফিসের অনেকে সাড়া দিলেও নাহিদার স্বামীর পক্ষে কোনদিন মসজিদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।
কেউ তাকে মসজিদে যেতে বললে একথা সেকথা বলে সে মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত থাকতো ।
বিভাগ:
গল্প