জীবনের অন্তিম মুহূর্তে রবের ইবাদতে এত গভীর ভাবে মগ্ন হওয়া যায়, শেষ আকাঙ্খা হিসেবে ইবাদতকে বেছে নেয়া যায়; হাতে গড়া নিষ্প্রাণ মূর্তি পূজারী বেওকুফ কাফেররা কোন দিন তা ভাবতেও পারেনি। তাইতো তখন বেশ কিছু চাপা প্রশ্ন তাদের হৃদয়-মনকে ক্ষত-বিক্ষত করছিল । বিবেকের দংশন তাদের ভিতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছিল। তাদের বিবেক বলছিল-তারা কি এমন নিষ্ঠার সাথে প্রভুর ইবাদত করতে পেরেছে? পেরেছে কি তাদের প্রতিমার সামনে এমন কায়মনোবাক্যে দাড়াতে? অন্তিম আকাংখা পূরণের সুযোগ পেলে তারা কি প্রতিমার পূজাকে পছন্দ করবে? বিবেকের এই প্রশ্ন বানে জর্জরিত হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছিল তারা।
নামায শেষে তাকে শূলিতে চড়ানো হলো । ৪০জনের
এক সারিবদ্ধ তীরন্দাজ দল চতুর্দিক দিক থেকে তার উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আঘাতের পর আঘাত
খেয়ে তার সমস্ত দেহ চালনীর মত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি আশ্চর্য! আল্লাহর প্রেমে নিবেদিত প্রাণ
খুবাইব (রাঃ) অবিশ্বাস্য রকমের শান্ত। রূপ কথার মত শুনালেও বাস্তব সত্য যে, “উহ' শব্দটি পর্যন্ত
তার মুখ থেকে বের হল না। নশ্বর দেহের সাথে কি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক আচরণ চলছে সে দিকে নয় বরং আরও উর্ধ্বে
অদৃশ্যলোকে তার দৃষ্টি । তার দৃষ্টি তখন সুদূর নীল আকাশের নীলিমায় নিবদ্ধ। দৃঢ় প্রশান্তিতে
তার মুখ মণ্ডল দীপ্তিমান। হয়তো সেখান থেকে বেহেশতের ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট দুরের দল তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। না
হয় জান্নাতের অবিনশ্বর নয়নাভিরাম সবুজ বাগ-বাগিচার দৃশ্যে আটকে রয়েছে তাঁর পলকহীন
দৃষ্টি ।
ইতিমধ্যে এক কাফের তাকে লক্ষ্য করে কসম খেয়ে বলল, খুবাইব। তুমি চাইলে এখনও পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যেতে পার। তবে শর্ত হল- একথা তোমাকে স্বীকার করতে হবে যে, তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তোমার পরিবর্তে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কতল করা হবে এতে তুমি সন্তুষ্ট ।
একথা শুনে হঠাৎ করেই যেন জ্বলে উঠল মৃত্যু পথযাত্রী খুবাইব (রাঃ) এর চোখের তারা। ঘৃণা আর ক্রোধে কাঁপতে শুরু করল তার সমস্ত দেহ। তার নেতিয়ে পড়া শির আঘাত খাওয়া ক্রুদ্ধ ব্যাঘ্রের ন্যায় ফুসে উঠল।