ফরিদ উদ্দীন বসের সম্মতির কথা শুনে ভাবনায় পড়ে গেল । সে মনে মনে বলতে
লাগলো, ২/৪ দিন হলে একটা কথা ছিল । ৪০ দিন সে কি করে থাকবে । তাছাড়া তারতো মদের নেশাও
রয়েছে। জামাতে বের হয়ে তো আর মদ পান করা যাবে না । কিন্তু এত চিন্তা করলে কি হবে! আল্লাহ তায়ালা
তো তার স্ত্রীর দোয়া কবুল করেছেন এবং তাবলীগে বের হওয়ার উসিলায় তাকে হেদায়েত দিতে
চাচ্ছেন । তাই হঠাৎ করেই যেন তার মুখ থেকে বের হলো, যান, আগামীকাল থেকেই আমি এক চিল্লার জন্য বের হবো
। আমি এখন বাসায় গিয়ে প্রস্তুতি নেই ।
একথা বলে সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে স্ত্রীকে বললো, নাহিদা! তোমার দোয়া
কবুল হয়েছে । আমি আগামী কাল থেকে ৪০ দিনের জন্য তাবলীগ জামাতে বের হওয়ার এরাদা করেছি।
তুমি আমার জন্য আরও বেশী করে দোয়া করো, যেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে হেদায়েত দান করেন।
স্বামীর মুখে একথা শুনে নাহিদা সীমাহীন আনন্দিত হলো । তবে কথাটি সত্য
কি-না এ ব্যাপারে তার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল । কিন্তু স্বামী যখন কাপড় চোপড় ইত্যাদি গুছিয়ে
বেডিং রেডী করে তার নিকট বিদায় নিতে আসলো, তখন তার যাবতীয় সন্দেহ সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে গেল। নাহিদা
তখন স্বামীকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফিরে দু'রাকাত শোকরানার নামায আদায় করলো
এবং মনে মনে বলতে লাগলো, আল্লাহ তাকে অবশ্যই হিদায়েত করবেন ।
যা হোক, ফরিদউদ্দীন ঢাকা কাকরাইল থেকে জামাত বন্দি হয়ে ১ চিল্লা অর্থাৎ
৪০ দিনের জন্য রাজশাহী চলে গেল । কিছুদিন যেতেই তার আমলের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন দেখা গেলো । সে নিয়ত করলো , আর কোনদিন মদ স্পর্শ করবে না, নামাজ ছাড়িবেনা
এবং দাড়ি মুন্ডাবে না । তাসবীহ হাতে জিকির করাকে সে তার সার্বক্ষণিক আমল বানিয়ে নিল।
উপরন্তু দৈনন্দিন যাবতীয় কাজে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করতে লাগলো
এবং এশরাক, আউয়াবিন ও তাহাজ্জুদকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করলো। এভাবে অল্প দিনের মধ্যেই
তার চেহারায় এক স্বর্গীয় আভা ফুটে উঠলো ।
একদিনের ঘটনা। জামাতের সবাই পরামর্শে বসেছে। আমীর সাহেব যখন বললেন, আজ
খেদমতে যেতে কে কে রাজী আছেন? ফরিদ উদ্দীন ভাবলো, আজ প্রায় এক মাস হয়ে গেল । আমি
তো একদিনও খেদমতে গেলাম না। জামাতের বড় বড় অফিসাররা ও খেদমতে গিয়ে আমাদের সবাইকে পাকশাক
করে খাওয়ালেন। কিন্তু আমি তো কোনদিন খাওয়ালাম না। তাই আমীর সাহেবকে লক্ষ্য করে দৃঢ়তার
সাথে সে বললো, হুজুর ! আমি রাজী আছি। অবশ্য একথা সে পূর্বেও ২/৪ দিন বলেছে।
বিভাগ:
গল্প