জীবন পরিবর্তনের এক বিস্ময়কর কাহিনী : পর্ব-৫ | সরলপথ.কম

 
অবস্থাদৃষ্টে ফরিদ উদ্দীনের সাথী পেরেশান হয়ে গেলেন। তিনি বারবার কি হয়েছে জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দীন শুধু একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, সে এক বিরাট ইতিহাস ।

 

: এই ইতিহাস আমি শুনতে পারি কি?

 

: হ্যাঁ, পারেন।

 

: তাহলে বলুন। 

 

অতঃপর ফরিদ উদ্দীন তার সাথীকে এক নীরব জায়গায় বসিয়ে বলতে লাগলো - নাহিদা নামের আমার এক স্ত্রী আছে । সে খুবই দীনদার মেয়ে । কিন্তু আমি ছিলাম সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলে তার এই দীনদারী ও বুযুর্গীকে কখনোই আমি পছন্দ করতাম না । সে বরাবরই ভালবাসার পরিবর্তে আমার কাছে পেয়েছে লাঞ্চনা, গঞ্জনা ও অপমান। সামান্য কারণেই আমি তাকে শক্ত মারপিট করতাম। খানায় একটু এদিক সেদিক হলে তো কোন কথাই নেই । কিল থাপ্পর লাথি-ঘুষি সমানে শুরু করে দিতাম । মুখ দিয়ে যা আসতো তা-ই বলতাম । কিন্তু এসব নির্যাতন নিপীড়নের পরেও সে টু' শব্দটি পর্যন্ত করতো না । শুধু নীরবে অশ্রু ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো । অথচ আমার মনে তখনও সামান্যতম দয়ার উদ্রেক হতো না।

 

ভাইজান! একটু সময় নিয়ে আবার সে বলতে লাগলো আজ জামাতের এতগুলো লোকের খাবার আমি নষ্ট করে দিলাম । ২য় বার লবণ দিয়ে উহাকে সম্পূর্ণ লবণাক্ত করে ফেললাম । তারা সবাই নীরবে খেয়ে চলে গেল। কেউ কিছুই বললো না। অথচ আমি আমার স্ত্রীকে খাবারের জন্য কত যে কষ্ট দিয়েছি, কত নির্যাতন করেছি তার কোন হিসেব নেই। আমি খোদার দরবারে এর কি জবাব দিব? একথা বলে সে আবারও চিৎকার করে কেঁদে ফেললো ।

 

ফরিদউদ্দীনের সাথী তাকে অনেক বুঝিয়ে বললো , ভাই! আপনি অতীতে যা কিছু করেছেন তা তো না বুঝে করেছেন । সামনে আর এমন করবেন না । বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চেয়ে নিবেন। আশা করি সে আপনাকে ক্ষমা করে দিবে । সে ক্ষমা করলে আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।

 

যা হোক ৪০ দিন পর অফিস টাইমের কিছু পূর্বে ফরিদউদ্দীন বাসায় পৌঁছে স্ত্রী নাহিদাকে বললো, অফিসের প্রায় সময় হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি একটু চা তৈরী করো । 

 

নাহিদা চা তৈরী করতে রান্না ঘরে গেল । কিন্তু খোদার কি অপার খেলা! চিনি ও লবণের কৌটা একই রকম হওয়ায় তাড়াহুড়ার মধ্যে লবণ দিয়েই সে চা তৈরী করে স্বামীর নিকট হাজির করলো । সময়ের সংকীর্ণতার জন্য চা কেমন হলো তা দেখারও সুযোগ হলো না । 

 

 
 
 
 
 
জীবন পরিবর্তনের এক বিস্ময়কর কাহিনী : পর্ব-৬

 

নবীনতর পূর্বতন