জীবন পরিবর্তনের এক বিস্ময়কর কাহিনী : পর্ব-৪ | সরলপথ.কম

 
আমীর সাহেব ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ লোক । নতুন সাথী হিসেবে তিনি ফরিদ উদ্দীনকে দীর্ঘ এক মাসের মধ্যেও খেদমতে দেননি। কিন্তু আজ ফরিদ উদ্দীনের অত্যধিক আগ্রহ, খেদমতের অনেক

ফজীলত এবং এটি সকলকেই শিখা দরকার ইত্যাদি চিন্তা করে তিনি একজন পুরোনো সাথীর সাথে তাকে খেদমতে দিলেন। সে এই দায়িত্ব পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলো এবং খেদমতের অপর সাথীকে নিয়ে সদাই পাতি ক্রয় করে রান্না বান্নার কাজ সমাপ্ত করলো । অবশেষে নির্ধারিত সময়ে সকলকে দুপুরের খানা খাওয়াল।
 
আছর বাদ রাতের খাবার তৈরীর জন্য তারা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লো । রান্নার কাজ প্রায় শেষের দিকে। মাগরিবের আযান শুরু হয়েছে। ফরিদ উদ্দীন অজু করতে চলে গেল। এমন সময় তার সাথী তরকারীতে পরিমাণ মত লবণ দিয়ে মসজিদে গমন করলো । অজু করে ফিরে এসে ফরিদ উদ্দীন ভাবলো, তরকারীতে তো এখনো লবণ দেয়া হয়নি। তাই সে আবারও লবণ দিয়ে তাড়াহুড়া করে জামাতে গিয়ে শরীক হলো । ফলে তরকারী এত লবণাক্ত হয়ে গেল যে, মুখে দেওয়ার কোন অবস্থা বাকী থাকলোনা। কিন্তু খোদার কি অসীম কুদরত ! নামায শেষে তাদের কেহই লবণ চেখে দেখলো না যে, তরকারীতে লবণ ঠিকমত হল কি-না।
 
তাবলীগ জামাতের একটি সাধারণ নিয়ম হলো, খানার আগে খানার আদব বয়ান করা। আদব বর্ণনার সময় খানার আয়েব বা দোষ না ধরার জন্য গুরুত্ব সহকারে বলে দেওয়া হয়। কারণ যারা রান্না করেন কেউই চায়না যে, খানা মজাদার ও সুস্বাদু না হোক । সুতরাং তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও যদি খানা স্বাদহীন হয় অথবা লবণ কিংবা ঝালে কম বেশী হয় তাহলে বুঝতে হবে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়েছে।
 
এশার পর তালীম শেষে সকলেই খেতে বসেছে। ফরিদউদ্দীন এবং তার সাথী খানা পরিবেশন করছে। সবাই মাথা নীচু করে যে যতটা পারে খেয়ে নিচ্ছে । কারোর মুখে কোন কথা নেই । এক সময় খাওয়া শেষ করে সবাই চলে গেল । এবার ফরিদ উদ্দীন ও তার সাথীর খাওয়ার পালা । তারা দু'জন খেতে বসেছে । ফরিদ উদ্দীন ২/৩টি লুকমা মুখে দিয়েই নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো । তার দু'গন্ড বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। হঠাৎ তার সাথী ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে জিজ্ঞাসা করলো, ভাই! আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে আপনার? আপনার কোন অসুবিধা হচ্ছে কি? জবাবে ফরিদ উদ্দীন কিছুই না বলে আরো জোরে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো । বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত দুচোখ দিয়ে পানি এসে তার সমস্ত চেহারাকে ভিজিয়ে দিল । 
 
নবীনতর পূর্বতন